Friday, March 14, 2025

জাপায় শুরু হচ্ছে লাঙ্গল ‘কবজায়’ নেওয়ার লড়াই

আরও পড়ুন

আগামী ৯ মার্চ দলের জাতীয় সম্মেলন শেষে জি এম কাদেরের হাত থেকে ‘লাঙ্গল’ প্রতীক ছিনিয়ে আনতে নতুন পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছেন রওশনপন্থিরা। এজন্য একাধিক ব্যক্তিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিক কাজ হিসেবে নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জাপার ১২ নম্বর নিবন্ধন অনুযায়ী দল পরিচালনার কথা জানিয়েছেন রওশন এরশাদ। সব মিলিয়ে সামনে জাপায় জমে উঠছে দলের প্রতীক রক্ষার লড়াই।

রওশনপন্থি প্রভাবশালী অন্তত পাঁচ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৯ সালে জাপার সর্বশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলের রেজিস্ট্রেশন জি এম কাদেরের নামে। প্রতীকের মালিকও তিনি। রওশনপন্থিদের পৃথক দল গঠনের চেষ্টায় সফল হতে হলে জাপার নামের চেয়ে ‘লাঙ্গল’ প্রতীক সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। মূলত দেশের উত্তরাঞ্চলসহ সবখানে লাঙ্গলের সমর্থকদের একই ছাতার নিচে আনতে বিশেষ এ গুরুত্ব দেওয়া।

তা ছাড়া জাপা পাঁচ ভাগে বিভক্ত হলেও তাদের কেউ লাঙ্গল প্রতীক পায়নি। ভিন্ন ভিন্ন প্রতীকে দল ভাগ হয়েছে। এ ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির নাম ব্যবহারে কোনো জটিলতা হয়নি। তবে লাঙ্গল প্রতীককেই জাপার মূলধারা হিসেবে রাজনীতিতে বিবেচনা করা হয়। কারণ, দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের হাত ধরেই একসময় লাঙ্গলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ছিল। এই প্রতীক ধরেই জাতীয় পার্টি অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে এখনো নামেমাত্র টিকে আছে।

রওশন অংশের নেতারা মনে করেন, জাতীয় পার্টি নামে কোনো দল রাজনীতিতে টিকিয়ে রাখতে হলে লাঙ্গল প্রতীকের কোনো বিকল্প নেই। তাই পৃথক জাতীয় পার্টি গঠনের চেয়ে লাঙ্গল প্রতীক পাওয়ার গুরুত্ব অনেক। এই প্রতীক পেতে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত লড়তে চান তারা। এ ক্ষেত্রে মেয়াদ শেষ হলেও জি এম কাদের সম্মেলনের আয়োজন না করার সুযোগও কাজে লাগাতে চান।

আরও পড়ুনঃ  তথ্য চাওয়ায় সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের পর ছেলেকেও শাসালেন ইউএনও

তবে ইসিতে দলের পক্ষ থেকে চিঠি দিয়ে সম্মেলনের জন্য এক বছর সময় চাওয়ার কথা জানিয়েছেন জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিনি বলেছেন, ইসির আইন অনুযায়ী আমরা সময় চেয়েছি। এই সুযোগে কেউ দলীয় প্রতীক ছিনিয়ে নিয়ে যাবে, তা আমি মনে করি না। তবে দল গঠনের স্বাধীনতা সবার আছে।

মেয়াদ শেষে জি এম কাদের কাউন্সিল না করায় জাপার নামে দ্বাদশ জাতীয় সম্মেলন আগামী ৯ মার্চ করতে যাচ্ছেন রওশনপন্থিরা। সাবেক বিরোধী দলের নেতা রওশন শারীরিকভাবে চলাফেরায় সক্ষম না হলেও মূলত তাকে সামনে ধরেই এগিয়ে যেতে চান অন্যরা। বিকল্প হাতিয়ার হিসেবে এরশাদের পুত্র সাদ এরশাদের ইমেজ কাজে লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। এ ছাড়া দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্মেলন করারও কোনো প্রস্তুতি নেই বর্তমান বিরোধী দলের।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে দলের জাতীয় সম্মেলনের পর থেকে জাপার নেতৃত্ব নিয়ে কোন্দল শুরু হয়। দেবর-ভাবির মধ্যে চলা ধারাবাহিক বিরোধ গত ৭ জানুয়ারির নির্বাচন ঘিরে নতুন মাত্রা পায়। জি এম কাদেরের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে রওশন ও তার অনুসারীরা নির্বাচন বর্জন করেন। এদিকে ২৬ আসনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাপার সমঝোতা হলেও শেষ পর্যন্ত ১১টি আসন পায় দলটি। ফল বিপর্যয়ের জন্য জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে দায়ী করে সরাসরি প্রতিবাদ জানান অনেকেই।

আরও পড়ুনঃ  জাহাজে জিম্মি জয়ের মায়ের আকুতি, ‘কলিজার টুকরাকে আমার বুকে ফিরিয়ে দাও মাবুদ’

এতে ক্ষুব্ধ হয়ে নির্বাচনের পর পার্টি থেকে প্রেসিডিয়াম সদস্যসহ কয়েকজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়, যারা রওশনপন্থি হিসেবে পরিচিত। এরপর জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুর বিরুদ্ধে ‘স্বেচ্ছাচারিতার’ অভিযোগ এনে ৬৭১ নেতাকর্মী পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এ অবস্থায় গত ২৮ জানুয়ারি এক মতবিনিময় সভায় রওশন নিজেকে দলের চেয়ারম্যান ঘোষণা করে বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের ও মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে ‘অব্যাহতি’ দেন। পরদিন নিবন্ধিত দল ১২ অনুযায়ী জাতীয় পার্টি পরিচালনার জন্য ইসিতে চিঠি দেন রওশন এরশাদ। যদিও সেই চিঠির শুনানি এখন পর্যন্ত হয়নি।

এদিকে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বেশ কয়েক বিদ্রোহী নেতাকে বহিষ্কার করেছেন জি এম কাদের। তাদের মধ্যে রয়েছেন কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশীদ, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, প্রেসিডিয়াম সদস্য সুনীল শুভ রায়, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক শফিকুল ইসলাম সেন্টু ও ভাইস চেয়ারম্যান ইয়াহ ইয়া চৌধুরী। আরও অন্তত ১০ জনকে বহিষ্কার করা হতে পারে বলে জাপা সূত্রে জানা গেছে।

আরও পড়ুনঃ  কুমিল্লায় উপনির্বাচনে গোলাগুলির ঘটনায় ছাত্রদল নেতা আটক

বহিষ্কৃত নেতাদের কম-বেশি সবাই যোগ দিয়েছেন রওশন অংশে। এতে চাঙ্গা হয়েছে এই পক্ষ। এরই মধ্যে চেয়ারম্যান হিসেবে রওশন এরশাদ দলের অব্যাহতি পাওয়া নেতাদের বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করে স্বপদে বহাল রেখেছেন।

রওশন অংশের নেতারা বলছেন, একে একে সবাই আসছেন এই অংশে। ৯ মার্চ কাউন্সিল সফল করতে ১১ সংসদ সদস্যের মধ্যে আটজনের জোরালো সমর্থন রয়েছে। কাউন্সিলের দিন জি এম কাদের অংশের হেভিওয়েট অনেক নেতাই প্রকাশ্যে আসার কথা রয়েছে। এ সুযোগে সম্মেলন শেষে রওশন এরশাদ জাপার মূল দল দাবি করে ইসিতে আবারও কমিটি, গঠনতন্ত্রসহ চিঠি দেবে। চিঠিতে আবারও ১২ নম্বর নিবন্ধন অনুযায়ী দল পরিচালনা, চেয়ারম্যান-মহাসচিবের নাম পরিবর্তনসহ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ঠিকানা ও নতুন টেলিফোন নম্বর যুক্ত করার কথা বলা হবে।

রওশনপন্থি অন্যতম নেতা অধ্যাপক দেলোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, মূলত প্রকৃত জাতীয় পার্টির মালিক রওশন এরশাদ। দলের নাম ও প্রতীক পাওয়ার একমাত্র বৈধ উত্তরাধিকারী তিনি। এজন্য আমরা সবখানেই লড়াই করতে প্রস্তুত।

জানতে চাইলে রওশনপন্থি জাপার মুখপাত্র সুনীল শুভ রায় কালবেলাকে বলেন, কাউন্সিল শেষে প্রতীকের জন্য লড়াই হবে। লাঙ্গল প্রতীক আমাদের পক্ষে আনতে প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হবো।

আপনার মতামত লিখুনঃ

সর্বশেষ সংবাদ