রাজধানীর নামিদামি এলাকাজুড়েই রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ অসংখ্য রেস্টুরেন্ট। বাইরে চাকচিক্য থাকলেও ভেতরে মৃত্যুফাঁদ। ধানমন্ডির সাত মসজিদ রোডে রয়েছে এমনই এক ভবন। ‘গাউছিয়া টুইন পিক’ নামের এই ভবনটির প্রায় পুরোটাতেই আছে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট।
ভবনটির স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ আজ শুক্রবার এক ফেসবুক পোস্টে ওই ভবন নিয়ে গুরুতর অভিযোগ তুলেছেন। তিনি লিখেছেন, নির্দিষ্ট ব্যবহারের ব্যত্যয় ঘটিয়ে ভবনটিতে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা চালানো হচ্ছে। এ ব্যাপারে জমির মালিক ও ডেভেলপারকে বারবার লিখিতভাবে সতর্ক করা হলেও কোনো ফল মেলেনি বলে দাবি তাঁর।
ভবনটি সম্পর্কে অভিযোগ করে এই স্থপতি লিখেছেন, ‘যতদূর জানি, এই ভবনের অগ্নিনিরাপত্তার অবস্থা ক্রমান্বয়ে ভয়াবহভাবে অবনমিত করা হয়েছে। ফায়ার ডোর খুলে ফেলা হয়েছে, ফায়ার স্টেয়ার স্টোররুম হয়েছে, যত্রতত্র গ্যাস সিলিন্ডার রাখা হয়েছে…।’
ভবনটির নকশা ও অনুমোদন বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে হলেও এর ব্যবহারে বড় রকমের ব্যত্যয় ঘটিয়ে সার্বিকভাবে ভবনটিকে অগ্নিঝুকিপূর্ণ রেস্তোরাঁ ভবনে রুপান্তর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মুস্তাফা খালিদ পলাশ। তিনি তাঁর পোস্টে লিখেছেন, ‘অর্থগৃধনুতার কাছে আমার আহাজারি বারবারই নিস্ফল হচ্ছে। ডেভেলপারকে জিজ্ঞেস করলে উত্তর আসে তাদের নাকি ফায়ার লাইসেন্স আছে। কী করে সম্ভব সেটা? কপি চাইলে নিরুত্তর। জমির মালিককে বললে উত্তর, ভাড়া হয় না তাই আর কি করা! তাদেরকে এও জানানো হয় যে, সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে ভবনের স্থপতি হিসেবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর অভিযোগ করা হবে।’
অনুমোদন ছাড়াই আবাসিক ভবনে নামিদামি রেস্তোরাঁঅনুমোদন ছাড়াই আবাসিক ভবনে নামিদামি রেস্তোরাঁ
এরপরও কাজ না হওয়ার গত মাসে সংশ্লিষ্ট এলাকার ফায়ার সার্ভিস বিভাগের স্টেশনমাস্টারকে বিষয়টি সম্পর্কে লিখিতভাবে অবহিত করেছেন বলে উল্লেখ করেছেন পলাশ। ওই পোস্টে পলাশ জানান, অভিযোগের পর ওই কর্মকর্তাও বিষয়টি ‘গুরুত্বের সঙ্গে দেখবেন’ বলে আশ্বস্ত করেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত অবস্থার কোনো হেরফের হয়নি।
স্থপতি মুস্তাফা খালিদ পলাশ আরও লিখেছেন, ‘এরপর আমার ঘনিষ্ঠ ফায়ার ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন ডিজিকেও তাঁর ক্ষমতা প্রয়োগের জন্য অনুরোধ করলে তিনি তার সাধ্যমতো তা করবেন বলে জানান। আজ আবার স্টেশনমাস্টার সাহেবকে সকালে বিস্তারিত তথ্য সমেত লিখলাম। দেখা যাক কি হয়।’
ছেলের আবদার মেটাতে কাচ্চি ভাইয়ে খেতে গিয়েছিলেন তানজিনা এশাছেলের আবদার মেটাতে কাচ্চি ভাইয়ে খেতে গিয়েছিলেন তানজিনা এশা
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ১৩টি ইউনিট প্রায় দুই ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। ভবনটিতে বিপুল গ্যাস সিলিন্ডারের মজুত ছিল, ছিল না অগ্নিনির্বাপণের কোনো ব্যবস্থা।
এ দুর্ঘটনার আবার আলোচনায় এসেছে রাজধানীর অসংখ্য অনুমোদনহীন ভবনের রেস্তোরাঁ ব্যবসা নিয়ে। আর কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই নড়েচড়ে বসে কর্তৃপক্ষ। তবে অনুমতির বাইরে যারা রেস্টুরেন্ট ব্যবসা করছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ নগর পরিকল্পনাবিদদের।
নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবীব বলেন, ‘৬টি সংস্থা এসব অবৈধ রেস্টুরেন্ট ও ভবনের দায় নিতে বাধ্য। কোনোভাবেই তারা এ মৃত্যুর দায় এড়াতে পারে না। সারা ঢাকা শহরে সবগুলো রেস্টুরেন্টেরই একই অবস্থা।’