দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে ভারী যানবাহন ও পথচারীকে সুরক্ষা দিতে ২০০৪ সালে বসানো হয়েছিল একটি পুলিশ বক্স। কিন্তু সেই পুলিশ বক্সে পাঁচ বছর ধরে থাকছে না পুলিশ। এতে ওই মহাসড়কে ছিনতাই ও অপরাধের ঘটনা বেড়ে গেছে। এমনকি দিনের পর দিন সড়কের পাশে অযত্নে অবহেলায় পড়ে থাকা সেই পুলিশ বক্সের জানালা দরজা খুলে নিয়ে গেছে চোরেরা।
বেহাল দশার এ পুলিশ বক্সটি দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা শহরের প্রবেশমুখ দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে। এলাকার নাম দুর্গাপুর।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত এক মাসে ওই পুলিশ বক্সের সামনে মহাসড়কে চলাচল করা দূর্গাপুর গ্রামের পথচারীদের মধ্যে প্রায় আটজনের মোবাইল ফোন ছিনতাই হয়েছে। গত ডিসেম্বরে দিনাজপুর থেকে গোবিন্দগঞ্জগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে ওই পরিত্যক্ত পুলিশ বক্সের সামনে থেকে সন্ধ্যায় দুর্বৃত্তরা পাথর ছুড়ে মারে। এতে করে বাসে থাকা এক নারীযাত্রী আহত হয়ে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন।
উপজেলার পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রহমত আলী বলেন, দূর্গাপুর ঢিবিসহ আশপাশের পথচারী ও পরিবহনের নিরাপত্তার কথা ভেবে ২০০৪ সালে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে এডিপির (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) মাধ্যমে ইটের দেয়াল ও টিনের ছাউনি দিয়ে একটি পুলিশ বক্স তৈরি করা হয়। তখন থেকে ১২ বছরের বেশি সময় ধরে সেখানে পুলিশ সদস্যরা পাহারা দিতেন। এর ফলে ওই সময়ে সেখানে ছিনতাই ও চুরি-ডাকাতি বন্ধ হয়েছিল। কিন্তু পাঁচ বছর ধরে সেখানে পুলিশের পাহারা না থাকায় এলাকায় আবারও চুরি ও ছিনতাই শুরু হয়েছে। গত এক মাসে আমার এলাকায় ৮ থেকে ১০টি জায়গায় চুরির ঘটনা ঘটেছে।
স্থানীয় লোকজন বলেন, গত বছর নভেম্বর মাসের এক রাতে ওই পুলিশ বক্সে চার দেয়ালে থাকা লোহার গ্রিলের পাঁচটি জানালা খুলে নিয়ে গেছে চোরেরা। পুলিশ বক্সে দক্ষিণ পাশের শ্যামপুর গ্রামের বাসিন্দা ও দোকানি সুপুল মুর্মু কালবেলাকে বলেন, উটিতো আর পুলিশ থাকে না। চোরেরা জানলা-দরজা খুইলে নিয়ে গেইছে। পুলিশের ঘরের জানলা-দরজা চোরেরা যদি খুইলে নিয়ে যায়, তাইলে তো হামার মতো মানুষের বাড়িঘরোত দরজা-জানলা কিছুই থাকপে না। পুলিশ পাহারা দিলে তোহামার এলাকার মানুষের উপকার হলোহনে।
এ ছাড়াও স্থানীয় পথচারীরা জানান, সন্ধ্যা লাগলেই পুলিশ বক্সে পাশের আদিবাসী গ্রামের কিছুসংখ্যক আদিবাসী চোলাই মদের ব্যবসা চালাচ্ছে। ফলে চোলাই মদসেবী মোটরসাইকেলের আনাগোনা বেড়ে চলেছে দিনের পর দিন।
দিনাজপুর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মমিনুল করিম পরিত্যক্ত পুলিশ বক্সটি পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, বিরামপুর থানায় পুলিশের জনবৃদ্ধি করে দূর্গাপুর এলাকা ও সেখানকার মহাসড়কে যেন কোনো ধরনের চুরি ছিনতাইয়ের ঘটনা না ঘটে সে জন্য পরিত্যক্ত পুলিশ বক্স সংস্কার করে পুলিশের জনবল বৃদ্ধি করে পাহারা বাড়াতে হবে।
বিরামপুর থানার ওসি সুব্রত কুমার সরকার বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে সুযোগ না থাকলেও সেখানে এখন নিয়মিত পুলিশের পাহারা জোরদার করা হবে।
পলিপ্রয়াগপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যন রহমত আলী কালবেলাকে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলে পুলিশ বক্সটি দ্রুত সংস্কার করে মহাসড়কে পুলিশের পাহারার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হবে।